সাধনা ১

যা পড়ছেন তা সরলভাবে বিশ্বাস করবেন না। কোনও কিছু সত্য না অসত্য তা বোঝার একমাত্র উপায় হল সেটিকে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। ভিতরের বিতর্ক থামান এবং এটিকে পরীক্ষার মধ্যে ফেলুন। যৌগিক পথটি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বিশ্বাসের পথ নয়, এটা পরীক্ষা করার পথ।

এখানে শুরু করার এক ব্যবহারিক উপায় দেওয়া হল।

এর পরের বার খাবার সময়, আপনার আশেপাশে কারও সঙ্গে প্রথম পনেরো মিনিট কথা বলবেন না। যে খাবার আপনি খাচ্ছেন, যে বাতাস শ্বাসের মাধ্যমে নিচ্ছেন, যে জল পান করছেন, তাদের প্রতি শুধু সক্রিয় এবং সচেতনভাবে সাড়া দিন।

যেমনটা আগেই বলেছি, আপনার সমগ্র দেহতন্ত্রটি এমনিতেই সাড়া দিচ্ছে। শুধু সচেতন হয়ে উঠুন সে বিষয়ে। এই আপেল, এই গাজর, এই রুটির টুকরোকে অবহেলার চোখে দেখবেন না। যদি আপনি কয়েকদিন না খেয়ে থাকেন, ভগবানকে নিয়ে আপনি ভাববেন না। আপনি শুধু খাবারের কথাই ভাববেন। এটা সেই জিনিস যা এই মুহূর্তে আপনাকে পুষ্টি জোগাচ্ছে, জীবনকে তৈরি করছে। এটা আপনার শরীরের প্রধান উপাদান। পুরোপুরি এবং সম্পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে খাবারের প্রতি সাড়া দিন।এই ফল, এই ডিম, এই রুটি, এই শাকসবজিদের সকলে নিজেরাই জীবনের অংশ, কিন্তু তারা স্বেচ্ছায় আপনার অংশ হয়ে উঠতে চায়। আপনি কি কারও জন্য এটা করতে ইচ্ছুক হবেন? আপনি আপনার পরিচয়কে হারাতে এবং কোনও একজনের সঙ্গে মিশে যেতে ইচ্ছুক নন। এমনকী আপনি আপনার কড়ে আঙুলটিকেও কারও জন্য সমর্পণ করতে ইচ্ছুক নন। সাধারণত যখন আপনার কিছু পাওয়ার থাকে তখন ক্ষণকালের জন্য সামান্য কিছু সমর্পণ করেন। আপনার ভালোবাসার সম্পর্কটিও অত্যন্ত হিসেবি সমর্পণের বস্তু। কিন্তু খাবারটি, যা কিনা নিজেই একটি জীবন হয়েও নিজেকে সম্পূর্ণ ত্যাগ করে দেয় আপনার অংশ হয়ে ওঠার জন্য।

এরপর, মুখ দিয়ে বাক্যটি উচ্চারণ না করেই সহজ ধারণাটি বহন করুন সারাদিন ধরে—‘আমার দায়িত্ব সীমাহীন; যদি আমি ইচ্ছুক হই, সব কিছুর প্রতি সাড়া দিতে পারি। ঘুমানোর আগে অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত এটা নিয়ে সচেতন থাকুন এবং জেগে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমেই নিজেকে এটা মনে করান।

এক মিনিটের পুরোটা জুড়ে যদি আপনার সীমাহীন প্রকৃতির সচেতন বোধটি ধরে রাখতে পারেন, আপনি একটি অসাধারণ রূপান্তর অর্জন করবেন। এক মিনিটকে খুব সাধারণ মনে হতে পারে, কিন্তু আপনি দেখবেন, এটা করার জন্য আপনার একটি নির্দিষ্ট স্তরের দক্ষতার প্রয়োজন হবে। শুধু এক মিনিটেই আপনি অভিজ্ঞতা এবং ক্রিয়াশীলতার একটি ভিন্ন মাত্রায় উত্তীর্ণ হতে পারেন। এই মুহূর্তে আপনার সচেতনতা অস্থির হয়ে আছে : এই মুহূর্তে আপনি সচেতন, পরের মুহূর্তেই হারিয়ে যাচ্ছেন। কোনও ক্ষতি নেই। প্রতি ঘণ্টায় নিজেকে মনে করান। এই সচেতন বোধকে নিয়ে পরীক্ষা করুন, এটাকে আরও গভীর হতে দিন এবং দেখুন, কী ঘটে।

সচেতনভাবে সাড়া দেওয়া আপনাকে জীবনের সঙ্গে সুগভীর এবং স্থায়ী সম্পর্কের অবস্থায় নিয়ে আসে, কোনও মতবাদ বা আবেগের বশে নয়, বরং জীবন যা, ঠিক সেভাবেই। জীবনের সঙ্গে এই আগ্রহী, সক্রিয় লিপ্ততার মাধ্যমে আপনি জীবনের দ্বারা আশ্লিষ্ট হন, এবং সেই আলিঙ্গন আপনাকে সৃষ্টির উৎসের কাছে নিয়ে যায়।

সৃষ্টিকর্তাকে স্পর্শ করার জন্য প্রয়োজন শুধু এটার ইচ্ছুক হয়ে ওঠা, আর কিছু নয়।

সাধনা  ২

নিজের সম্পর্কে আপনি এটা খেয়াল করে থাকতে পারেন যখন আপনার প্রীতিকর অনুভূতি হয়, আপনি নিজেকে প্রসারিত করতে চান; আর যখন ভয়ার্ত থাকেন, আপনি সঙ্কুচিত হতে চান। এটা চেষ্টা করুন। কোনও গাছের সামনে কয়েক মিনিটের জন্য বসুন। নিজেকে মনে করান যে, গাছেরা যা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ছাড়ছে, তা আপনি শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করছেন, এবং আপনি যে নিঃশ্বাসটি ছাড়ছেন, গাছেরা তা গ্রহণ করে নিচ্ছে। এমনকী আপনি যদি অনুভূতির স্তরে এটা নিয়ে সচেতন নাও হন, উদ্ভিদটির সঙ্গে একটি মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্ক স্থাপন করুন। দিনের মধ্যে কয়েকবার এটা পুনরাবৃত্তি করতে পারেন। কয়েক দিন পর থেকেই চারপাশের সব কিছুর সঙ্গে আপনি ভিন্ন ভাবে সম্পর্ক তৈরি করতে শুরু করবেন। আপনি গাছের প্রতিই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখবেন না।

ঈশা যোগ কেন্দ্রে এই সাধারণ পদ্ধতিটি ব্যবহার করে আমরা দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য তামিলনাড়ুতে পরিবেশ সংক্রান্ত উদ্যোগ বিশালভাবে শুরু করেছি, যার তত্ত্বাবধানে ২০০৪ সাল থেকে তিন কোটি দশ লক্ষ গাছ লাগানো হয়েছে। মানুষের মনের মধ্যে গাছ রোপণ করতে আমরা কয়েক বছর কাটিয়েছি, যেটা হল সবচেয়ে কঠিন ভূখণ্ড। এখন সেগুলিকে অন্যত্র রোপণ করা অনেক বেশি অনায়াসেই ঘটেছে।

সাধনা ৩

ঘুমানোর ঠিক আগে, সেই সমস্ত জিনিস যেগুলিকে আপনি মনে করেন আপনি স্বয়ং : আপনার চিন্তা, আপনার আবেগ, আপনার কেশ, আপনার ত্বক, আপনার পোশাক, আপনার প্রসাধন সেগুলির দিকে মনোযোগ দেওয়া শুরু করুন। জানুন যে, এর কোনওটাই আপনি নন। 'আপনি' কে এবং ‘সত্য' কী, সে বিষয়ে কোনও সিন্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন নেই। সত্য কোনও উপসংহার নয়। মিথ্যা ধারণাগুলিকে যদি দূরে সরিয়ে রাখেন, সত্য উদিত হবে। এটা আপনার রাত্রির অভিজ্ঞতার মতো সূর্য অস্ত যায়নি, বিষয়টা এই যে, গ্রহটা অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের সম্পর্কে আপনি ভাবছেন, পড়ছেন, কথা বলছেন কারণ অন্য দিকে তাকিয়ে থাকাতেই আপনি খুব ব্যস্ত! আপনি নিজে সত্যিই কী, তা জানতে আপনি যথেষ্ট মনোযোগ দেননি। প্রয়োজন যা, সেটা কোনও উপসংহার নয়, বরং ঘুরে দাঁড়ানো। যদি এই সচেতনতা নিয়ে ঘুমের মধ্যে প্রবেশ করতে পারেন, এটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। ঘুমের মধ্যে যেহেতু কোনও বাহ্যিক হস্তক্ষেপ থাকে না, এটা শক্তিশালী অভিজ্ঞতা হয়ে উঠবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, যাবতীয় সংগ্রহের ঊর্ধ্বে একটি মাত্রায় প্রবেশ করবেন আপনি।

সাধনা ৪

চারপাশে তাকান। আপনার পরিবার, সহকর্মী এবং বন্ধুদের মধ্যে প্রত্যেকের উপলব্ধির স্তর যে আলাদা সেটা কি দেখতে পান? খুব নিবিড়ভাবে এটা দেখুন। যাদের উপলব্ধির স্বচ্ছতা বেশি বলে মনে হয় এরকম কিছু মানুষকে যদি জানেন, দেখুন তাঁরা কীভাবে নিজেদের শরীরকে পরিচালনা করেন। তাঁদের প্রায় অনুশীলন ছাড়াই একটি ভারসাম্য থাকে। কিন্তু সামান্য অনুশীলনই অনেকটা তফাত করে দিতে পারে। দিনের মধ্যে মাত্র কয়েক ঘণ্টা যদি মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসতে পারেন, দেখবেন এর একটা সন্দেহাতীত প্রভাব থাকবে আপনার জীবনে। এখন আপনি বুঝতে শুরু করবেন আপনার অস্তিত্বের জ্যামিতি বলতে আমি কী বোঝাতে চাই। শুধু কীভাবে আপনার শরীরকে ধরে রাখছেন সেটিই আপনার সব কিছুকে নির্ধারণ করে দেয়।

জীবনের কথা শোনার আরও একটি উপায় হল অনুভূতির মাধ্যমে এর দিকে মনোযোগ দেওয়া, বুদ্ধি বা আবেগের মাধ্যমে নয়। আপনার শ্বাস, আপনার হৃৎস্পন্দন, আপনার নাড়ি, আপনার কড়ে আঙুল এদের মধ্যে যে-কোনও একটা জিনিসকে বেছে নিন। টানা এগারো মিনিট ধরে শুধু তার দিকেই মনোযোগ দিন। দিনে অন্তত তিনবার এটা করুন। যে-কোনও একটি সংবেদনের প্রতি মনোযোগ রাখুন, কিন্তু যা করছিলেন সেটা করতে থাকতে পারেন। যদি মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন, তাতে কিছু যায় আসে না। আবার তাতে মনোযোগটি ফিরিয়ে আনুন। এই অনুশীলন আপনাকে মানসিক সতর্কতা থেকে সচেতনতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আপনি দেখতে পাবেন যে, আপনার জীবনে অনুভবের মান বদলে যেতে শুরু করবে।

সাধনা ৫

মেরুদন্ডকে সোজা রেখে আরামদায়কভাবে বসুন, প্রয়োজন হলে হেলান দিতে পারেন। স্থির থাকুন। আপনার মনোযোগকে ধীরে-ধীরে স্থির হয়ে যেতে দিন। পাঁচ থেকে সাত মিনিট প্রতিদিন এটা করুন। খেয়াল করলে দেখবেন, আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি কমে আসবে।

মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি কমিয়ে আনার তাৎপর্য কী? এটা কি শুধুই শ্বাস-প্রশ্বাসের কিছু যৌগিক অ্যাক্রোব্যাটিক্স? না, এটা তা নয়। মানুষ স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতি মিনিটে বারো থেকে পনেরো বার শ্বাস নেয়। আপনার শ্বাসের গতি যদি বারোতে নেমে আসে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গতিপ্রকৃতিও জানতে পারবেন (অর্থাৎ, আপনি আবহবিদ্যাগতভাবে অনুভূতিপ্রবণ হয়ে উঠবেন)। যদি এটা নয়-তে নেমে আসে, এই গ্রহের অন্য প্রাণীদের ভাষা আপনি জেনে যাবেন। যদি এটা হয়ে নেমে আসে, এই পৃথিবীর ভাষাও আপনি জেনে যাবেন। যদি এটা তিনে নেমে আসে, সৃষ্টির উৎসের ভাষাও আপনার অবগত হবে। এটা আপনার শ্বাস ধারণ করার ক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে নয়। আর না এটা আপনাকে জোর করে শ্বাস নেওয়া থেকে বঞ্চিত করা। হঠযোগ এবং ক্রিয়া হিসেবে পরিচিত উন্নত যৌগিক অনুশীলনের সমাহার ধীরে-ধীরে আপনার ফুসফুসের সক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে। কিন্তু সর্বোপরি, আপনাকে স্বাচ্ছন্দ্য, সামঞ্জস্য অর্জনে এমনভাবে সাহায্য করবে যে, যাতে আপনার দেহতন্ত্র স্থায়িত্বের এমন একটি স্তরে বিবর্তিত হয় যেখানে কোনও কম্পন নেই, কোনও আলোড়ন নেই; এটা শুধু সব কিছুকেই উপলব্ধি করে।

সাধনা ৬

যে মুহূর্তে শরীর পৃথিবীর সংস্পর্শে আসে, এটি সাড়া দেয়। সেই কারণেই ভারতে আধ্যাত্মিক পথে চলা মানুষরা খালি পায়ে হাঁটতেন এবং সর্বদা মাটির ওপর এমন ভঙ্গিতে বসতেন যাতে সবচেয়ে বেশি অংশ মাটির সংস্পর্শে থাকে। এই পদ্ধতিতে শরীরকে অনুভবের মাধ্যমে জোরালোভাবে মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে, এটি শুধু এই মাটিরই এক অংশ। শরীরকে কখনওই তার উৎসকে ভুলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হতো না। একে ভুলে যেতে দিলেই প্রায়ই এটা অবাস্তব দাবি করতে শুরু করে। একে প্রতি মুহূর্তে মনে করিয়ে দিলে, নিজের জায়গা সম্পর্কে এটা অবহিত থাকে। মাটির সংস্পর্শে থাকার অর্থ হল ভৌত উৎসের সঙ্গে এর অত্যাবশ্যক পুনঃসংযোগ স্থাপন করা। এটা দেহতন্ত্রের মধ্যে স্থায়িত্বকে পুনরুদ্ধার করে এবং পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সক্ষমতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এর থেকেই বোঝা যায়, কেন অনেক মানুষ দাবি করেন যে শুধুমাত্র বাগান পরিচর্যার মতো সাধারণ কাজকর্ম দিয়েই তাঁদের জীবন নাটকীয়ভাবে রূপান্তরিত হয়েছে।

আজকাল অসংখ্য কৃত্রিম উপায়ে মাটি থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখি-পাকা রাস্তা এবং বহুতল বাড়ি তৈরি বা এমনকী উঁচু হিল পরার সর্বব্যাপী প্রবণতা সমগ্র থেকে অংশকে আলাদা করে রাখে এবং জীবনের মৌলিক প্রক্রিয়াকে শ্বাসরুদ্ধ করে দেয়। এই বিচ্ছিন্নতা প্রকাশ পায় বড় মাপের অটো-ইমিউন ডিসঅর্ডার এবং দুরারোগ্য অ্যালার্জির মাধ্যমে।

যদি আপনার খুব সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়ার প্রবণতা থাকে, আপনি মেঝের উপর শোওয়ার চেষ্টা করতে পারেন (অথবা এক খানা জৈব বস্তুর দ্বারা নিজেকে মেঝের থেকে সামান্য দূরত্বে রাখতে পারেন)। দেখবেন, এটা একটা বড় তফাত সৃষ্টি করবে। এর সঙ্গে, মাটির কাছাকাছি বসার চেষ্টা করুন। এছাড়াও, যদি কোনও গাছ খুঁজে পান যেটাকে খুবই জীবন্ত দেখতে লাগে, যা তাজা পাতা এবং ফুলে সমৃদ্ধ, কিছুটা সময় তার চারপাশে কাটান। যদি সম্ভব হয়, প্রাতরাশ অথবা দ্বিপ্রাহরিক ভোজন সারুন সেই গাছটির নীচে। সেই গাছটির নীচে বসে নিজেকে মনে করান, 'এই মাটিই হল আমার শরীর। এই মাটি থেকেই আমি শরীরটা নিয়েছি, আর মাটিকেই এটা ফিরিয়ে দেব। আমি সচেতনভাবে ধরিত্রী মায়ের কাছে চাইছি, আমাকে বাঁচিয়ে রাখতে, ধরে রাখতে এবং সুস্থ রাখার জন্য। দেখবেন যে আপনার শরীরের নিজেকে পুনরুদ্ধারের ক্ষমতা দারুণভাবে বৃদ্ধি পাবে।

অথবা সব গাছকেই যদি আসবাবে পরিণত করে থাকেন, কিছুটা টাটকা মাটি নিন এবং তা দিয়ে আপনার হাত ও পা দুটিকে ঢেকে রাখুন। কুড়ি থেকে তিরিশ মিনিটের জন্য ওভাবে থাকুন। এটা আপনাকে দারুণভাবে সেরে উঠতে সাহায্য করবে।

সাধনা ৭

ভক্তি ও শ্রদ্ধার সঙ্গে পাঁচটি তত্ত্বের যত্ন নেওয়া—এই হল সবচেয়ে সহজ উপায় যা আপনি স্বাস্থ্য এবং দেহের মৌলিক গঠনকে বদলানোর জন্য করতে পারেন। শুধু এটা চেষ্টা করুন। যখনই আপনি যে-কোনও একটি উপাদানের সংস্পর্শে আসবেন (যা আপনার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ঘটছে), সচেতনভাবে চেষ্টা করুন এটাকে তাঁর মতো করে দেখতে যাকে আপনি জীবনের সর্বোচ্চ অথবা মহত্তম আদর্শ বলে মনে করেন, তা সে শিব, রাম, কৃষ্ণ, ভগবান, আল্লাহ যাই হোক (বা এমনকী কার্ল মার্ক!)। এই মুহূর্তে আপনি একজন মনস্তাত্ত্বিক সত্তা, এবং আপনার মন এখন উঁচু-নিচু বিভেদে ভর্তি। এই প্রক্রিয়াটি মনের এই বিভেদবোধ মিটিয়ে দেবে। কিছুটা সময় পর, শব্দটির আর প্রয়োজন হবে না। কিন্তু আপনি সঙ্গে-সঙ্গেই পরিবর্তন দেখতে পাবেন এবং আপনার জীবনে প্রকৃত সচেতন মুহূর্তের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। যে বাতাস শ্বাসের মাধ্যমে নেন, যে খাবারটি আপনি খান, যে জল পান করেন, যে মাটির ওপর দিয়ে হাঁটেন এবং যে মহাশূন্য আপনাকে ধরে রেখেছে—তাদের প্রত্যেকটিই আপনাকে দৈব সম্ভাবনা প্রদান করে।

সাধনা ৮

সারাদিন ধরে বারবার না খেতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি তিরিশ বছরের নীচে হন, প্রতিদিন তিনবার খাওয়া আপনার জীবনের জন্য উপযুক্ত। আপনার বয়স তিরিশের বেশি হলে, দুবার আহারে নামিয়ে আনা সবচেয়ে ভালো। আমাদের শরীর এবং মস্তিষ্ক সবচেয়ে ভালো কাজ করে যখন পেট খালি থাকে। তাই খাওয়ার ব্যাপারে এমনভাবে সচেতন থাকুন যাতে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে খাদ্য পাকস্থলী থেকে বেরিয়ে যায় এবং বারো থেকে আঠারো ঘণ্টার মধ্যে যাতে দেহ থেকে পুরোপুরি নির্গত হয়। এই সামান্য সচেতনতা থেকেই আপনি অনেক বেশি শক্তি, সতেজতা এবং সতর্কতা অনুভব করবেন। এগুলোই হল সফল জীবনের উপাদান, তা জীবনকে নিয়ে আপনি যাই করতে চান না কেন।

সাধনা ৯

আপনি পরীক্ষা করতে পারেন আপনার জন্য সম্ভাব্য সবচেয়ে ভালো খাবারের আয়োজন করুন, কোনও জিনিসের ওপর ক্রুদ্ধ হয়ে উঠুন, সারা পৃথিবীকে অভিশাপ দিন এবং তারপর এটা খান। আপনি দেখবেন, সেদিন খাবারটা আপনার মধ্যে কীরকম আচরণ করে। পরের বার খাওয়ার সময়, জীবন গঠনের উপকরণ যতটা শ্রদ্ধা দাবি করে ততটা নিয়ে খাবারের কাছে যান এবং এটা খান। এখন দেখবেন, আপনার মধ্যে এটা কীরকম আচরণ করে। (অবশ্য যদি বিচক্ষণ হন, প্রথমটাকে উপেক্ষা করে আপনি দ্বিতীয়টাই করবেন)!

অধিকাংশ মানুষই যে পরিমাণ খাবার খাচ্ছেন, তাকে এক তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনতে পারেন এবং শরীরের ওজন না কমিয়েও অনেক বেশি সক্রিয় হতে পারেন। প্রশ্ন শুধু এটাই যে, নিজের ভিতরে কতখানি গ্রহণ করার ক্ষমতা আপনি তৈরি করতে পেরেছেন। আপনার শরীর সেই অনুযায়ী গ্রহণ করে। যে খাবার খান, তার তিরিশ শতাংশ খেয়েই যদি একই পরিমাণ কাজ করতে পারেন, সমস্ত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বজায় রাখতে পারেন, নিশ্চিতভাবেই তার অর্থ হল, অনেক বেশি দক্ষ একটি যন্ত্রকে আপনি চালাচ্ছেন।

সাধনা ১০

প্রতিদিন খাওয়ার কয়েক মিনিট আগে এক চামচ দেশি ঘি খেলে তা পাচনতন্ত্রের জন্য বিস্ময়করভাবে কাজ করে। মিষ্টিতে যে-ভাবে থাকে, ঘি চিনি মিশিয়ে খেলে তা হজম হয়ে যায় এবং চর্বিতে পরিণত হয়। কিন্তু চিনি ছাড়া এটি খাদ্যনালীকে পরিষ্কার, আরোগ্য এবং মসৃণ করতে পারে। তা ছাড়াও, কোলনের পরিশ্রুতীকরণ, ত্বকের উজ্জ্বলতা এবং সজীবতার মাধ্যমে তৎক্ষণাৎ প্রকাশিত হয়। যাঁরা দুধের জিনিস খেতে পছন্দ করেন না, তাঁরাও এটা নিয়ে পরীক্ষা করতে পারেন কারণ, ঘি দেহের মধ্যে দিয়ে পার হয়ে যায় বেশিরভাগটাই হজম না হওয়া অবস্থায়।

See Full Sadhona - Click me